বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক, ইউএনও (বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার হাতিরবান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মো.শামীম মিয়া, বরগুনা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে ইন্সপেক্টর, টুরিস্ট পুলিশ, আবুল কাশেম মো: মিজানুর রহমান, বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (বর্তমানে- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভোলা সদর) মো: জিয়াউর রহমান ও বরগুনা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো: সোহেল রানার বিরুদ্ধে গত ০৩/০৩/২০২৫ ইং তারিখ বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর মামলা নং- ২৭৮/২০২৫, ধারা: ৩৪২/৩৮৫/৩৯৩/৫০০/৫০৬ (২য় খন্ড) দায়ের করা হয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ আনিসুজ্জামান মামলাটি গ্রহণ করে পটুয়া খালী জেলা বিআই পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছন।
আওয়ামী সরকারের আমলে পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিয়ার কাছে গিয়েছিলেন অপরাধ বিচিত্রার মফস্বল সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম। কিন্তু তথ্য না দিয়ে উল্টো সাংবাদিককে হেনস্তা করে ইউএনও শামীম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এক আনসার সদস্য। পরে ইউএনও শামীম মিয়া তার সরকারি গাড়িতে করে ফিল্মি স্টাইলে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যায় থানায়। সেখানে তাকে নয় ঘন্টা হাজতে আটকে রাখে ওসি আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান । এসময় মুক্তির জন্য সাংবাদিকের কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন তারা। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক রাশেদুলের মোবাইল জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে দুর্নীতির সকল প্রমাণ মুছে দেয় এসআই মো. সোহেল রানা। এমন অভিযোগ সাংবাদিক রাশেদুল ইসলামের।
মামলা সূত্রে জানা যায়, অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। এ সময় কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম মিয়ার কাছে মৌখিকভাবে তথ্য জানতে চান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদুলকে কিছু তথ্য দিয়ে ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ইসপ্লিমেন্টেশন অফিসার মো. জিয়াউর রহমানের কাছে পাঠালে তিনি তাকে দুই দিন পরে যেতে বলেন। পরে নির্ধারিত দিনে আবারও তথ্যের জন্য অফিসে গেলে রাশেদুলকে ওই প্রকল্পের তথ্য দিতে তারা অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া তাকে চাঁদাবাজীর কথা বলে পুলিশে দেওয়ারও হুমকি দেন। পরে অফিসে থাকা আনসার সদস্যের মাধ্যমে রাশেদুলকে সরকারি গাড়িতে উঠিয়ে বরগুনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাশেদুলকে ছেড়ে দিতে তার কাছে টাকা দাবি করা হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী রাশেদুলের কাছে থাকা প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির ডকুমেন্ট মুছে ফেলাসহ অভিযুক্তদের নিজস্ব লোকজনের মোবাইল ফোন থানা হাজতে আটকে রেখে তার ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক ভাবে রাশেদুলকে হেনস্থা করা হয়। পরে বরগুনা রিপোটার্স ইউনিট ও সংবাদিক ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক ও রাশেদুলের পরিবারের লোকজন থানায় এলে অভিযুক্ত আসামিদের লিখিত একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর রেখে রাশেদুলকে তার মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলার বাদী সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের আমলে এসকল দুর্নীতিবাজরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তার উপর অন্যায়-অবিচার করেছে। সেসময় সাংবাদিক সমাজের শক্ত অবস্থানের কারণে ইউএনও এবং ওসি হাজতে আটকে রাখতে পারে নি। ওই তার নিজের পৈতৃক জেলা থেকেই তাকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম মিয়া। তবে সৃষ্টিকর্তার অপার করুনায় আদালতের দ্বারস্থ হতে পেরেছেন তিনি। এবার ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রাশেদুল।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট রাজিকুল ইসলাম আজম বলেন, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত প্রতিটি প্রমাণ ও ঘটনার সময়ের অমানবিক ঘটনার ভিডিও দেখেছেন। এরপর শুনানী শেষে মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ইউএনও শামিম মিয়া ও তার সহযোগী পিআইও জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বরগুনার প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার মনিরুজ্জামান মনিরের কাছ থেকে কাজের নামে ৪২ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে ৮ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন কর্মকর্তারা।
ঠিকাদার মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ইউএনও শামীম মিয়া ও পিআইও জিয়াউর রহমান আওয়ামীলীগের আমলে আমার কাছ থেকে ৪২ লাখ টাকা নিয়েছে। এরমধ্যে ৮ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে দিয়েছি। তারা কাজের টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে রেখেছিল। প্রতিটি উন্নয়ন কাজের জন্য ঠিকাদাররা তাদের চাঁদা দিতে হতো। সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়েও টাকা নিয়েছে তারা। এবার আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।’
জানতে চাইলে বরগুনা সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিম মিয়া বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনো ঘটনা ঘটলে তিনি তাৎক্ষণিক আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। একজন নাগরিক তার মামলা করার অধিকার আছে। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রমাণিত হবে আমি দোষী কিনা।
বরগুনা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি বরগুনায় দায়িত্ব পালনকালিন রাশেদকে থানায় রাখছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়া একজন সাংবাদিককে ধরে দীর্ঘ সময় থানাহাজতে আটক রাখা যায় কিনা এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি মিজানুর রহমান।
বরগুনা থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল রানার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি মামলা হয়েছে। মামলায় কি উল্লেখ করা হয়েছে তা না জেনে কিছু বলতে পারবো না।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানর সাথে যোগাযোগ করতে ফোন করে ও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরোও পড়ুনঃ সালাম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম
উপদেষ্টা:
প্রকাশক: মোছাঃ খাদিজা আক্তার
বিথী
সম্পাদক: আফজাল শরীফ
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ হারুন-অর-রশিদ
বার্তা সম্পাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম বাহার
সহকারী বার্তা সম্পাদক: মুহাম্মাদ লিটন ইসলাম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সংলগ্ন জব্বারগঞ্জ বাজার,
বকশীগঞ্জ, জামালপুর
Copyright © 2025 দশানী ২৪. All rights reserved.