জামাল উদ্দিনঃ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে তামান্না শারমিনকে বলতে শোনা যায় ‘কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ছেড়ে জামাইকে নিয়ে আসব’। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’ সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে তার স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্ত করবেন। বীরের বেশে ফিরবেন তার স্বামী।’
রোববার (১৬ মার্চ) সকালে তামান্নার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তামান্না বলেন, ‘আমার জামাই গতকাল (শনিবার) রাতে অ্যারেস্ট হইছে। মামলা যখন আছে, অ্যারেস্ট হবে। কিন্তু যারা ভাবছেন, সে আর বের হবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে জামিন করিয়ে আনব।’
তিনি আরও হুমকি দেন, ‘এখন যারা এই ঘটনা ঘটাইছে, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষে বীরের বেশে ফিরবে, তখন খেলা শুরু হবে।’
রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালত সাজ্জাদকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল।
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ডাবল মার্ডারসহ একাধিক হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে তাহসিন নামে এক যুবককে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। এছাড়া গত বছর ২৯ আগস্ট বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে দুইজনকে হত্যা করেন তিনি।
গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে হুমকি দেয় সাজ্জাদ। পরে পুলিশ তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী এলাকার বাসিন্দারা সাজ্জাদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আতঙ্কিত ছিলেন। নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন তিনি।
দীর্ঘ ৪-৫ মাস ধরে প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে ছোট সাজ্জাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল পুলিশ। সাজ্জাদকে ধরার জন্য সিএমপি উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি টিম ঢাকায় গোপন অভিযান চালান।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ইন্টেলিজেন্স টিম সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শনাক্ত করে, যা ছিল ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত আধুনিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটি। সিএমপি পুলিশের সাদা পোশাকের একটি দল আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেয়।
সাজ্জাদ যখন ঈদের শপিং করতে শপিংমলের একটি দোকানে প্রবেশ করে, তখনই তাকে গ্রেপ্তার করেন ডিসি আমিরুল ইসলাম। তাকে গ্রেপ্তারের ৩০ মিনিট পর পাশের তেজগাঁও থানায় খবর দেওয়া হলে, সেখান থেকে পুলিশের একটি টিম এসে সাজ্জাদকে থানায় নিয়ে যায়।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন দাবি করেন—তেজগাঁও থানা পুলিশের হাতে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হন। তবে ঘটনাস্থল বসুন্ধরা সিটিতে সাদা পোশাকে চট্টগ্রাম উত্তর জোনের ডিসি আমিরুল ইসলামকে দেখা গেছে।
Leave a Reply