মালিকুজ্জামান কাকাঃ যশোরের কেশবপুর উপজেলার জাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ ৭ মাস চলার পর আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার হযরত আলী সরদার ৩ শতক জমি দাবি করে আদালতে মামলা করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে ঠিকাদারসহ বিদ্যালয়ের কোমলমতি কয়েকশত শিক্ষার্থী।
১৯৫৮ সালে জাহানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করে তাতে চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমান ২৪১ জন। অফিস রুমসহ ১১টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬টি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে বিপাকে পড়েন শিক্ষকরা।
উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর জানায়, স্কুলের শ্রেকিক্ষ সংকট নিরসনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মাণে ৯৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৬ টাকার প্রাক্কলন করে দরপত্র আহবান করা হয়। সর্বনিন্ম দরদাতা হিসেবে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের ১২ জুন শেষ করার শর্তে কাজটি পান যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন ত্রিআর এন্টারপ্রাইজ। এ কাজের সাহযোগী ঠিকাদারের দায়িত্ব পান কেশবপুরের গাজী এন্টারপ্রাইজের মালিক আরমান আলী গাজী।
৭ মাস কাজ চলার পর এলাকার হযরত আলী সরদার নির্মাণাধীন ভবনের জায়গায় ৩ শতক জমি নিজের দাবি করে যশোর সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি কাজ বন্ধের আদেশ দেয়। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে ভবনের নির্মাণ কাজ।
মামলার বাদী হযরত আলী সরদার বলেন, মূল ভবনের উত্তরাংশে নির্মাণাধীন ভবনে আমার ৩ শতক জমি দখল করে তারা ঘর করছে। যে কারণে আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালত নির্মাণ কাজ বন্ধের আদেশ দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষেকে নোটিশ দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা বেগম জানান, ভবন নির্মাণের জন্যে প্রতিষ্ঠানের জমি মাপজোখ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের চারপাশের জমির মালিকরা ৪ ফুট করে জমি জবর দখল করে রেখেছে। এছাড়া বাদী হযরত আলীর বিদ্যালয়ের ভবনের জায়গায় কোনো জমি না থাকলেও হয়রানি করতে মামলাটি করেছেন। বর্তমান বিদ্যালয়ে অফিস রুম, আইসিটি রুম ও প্রাক প্রাথমিকের রুম থাকায় অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩টি রুম। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পাড়াশুনা চালানো সম্ভব নয়। ফলে কক্ষ সংকটে বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ঠিকাদার আরমান আলী গাজী বলেন, পাশের জমির মালিকদের একের পর এক বাধার কারণে তিনি সময় মত কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হন। অবশেষে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তিনি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ভবনের বেজ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করে রড জমিয়ে ভিত স্থাপনের কাজ চলছিল। ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চুরি হয়ে যাচ্ছে ইট, রড, সিমেন্টসহ ড্রাইভ মেশিনের ব্যাটারি। কাজ বন্ধ হওয়ায় তিনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী নাজিমুল হক বলেন, কাজটি শুরুর সাথে সাথে পাশের জমির মালিকেরা ঠিকাদারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বিএনপি অফিস বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট শার্শার অগ্রভুলোট গ্রাম এখন পুরুষশুন্য
Leave a Reply