মালিকুজ্জামান কাকাঃ আওতাধীন অঞ্চলে বিদ্যালয় কমিটি গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। একযোগে ৪৮০০ বিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠনে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে বোর্ড কর্মকর্তাদের। ব্যপক রয়েছে সুপারিশ-তদবির চাপ। সাথে যোগ হয়েছে দ্রুততম সময়ে কমিটি গঠনে ভুল-ভ্রান্তি ও অনিয়ম শঙ্কা।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৪৪৮টি, কলেজিয়েট স্কুল-১২৩ ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২০টি। এছাড়াও পাঠদানের অনুমতি প্রাপ্ত, স্থাপনার অনুমতি প্রাপ্ত ও অনুমোদনের আবেদন জমাকৃত আরো ১৯০০ প্রতিষ্ঠানে নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
গত ডিসেম্বর ৩ দেশের সকল স্কুল কলেজ পরিচালনা পরিষদ বিলুপ্ত করে শিক্ষা মন্ত্রানালয়। তখন থেকে কমিটিহীন স্কুল-কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোতে ইতোমধ্যে কমিটি গঠিত হলেও বাকি আছে স্কুল কমিটি। যা গঠনের দায়িত্ব শিক্ষা বোর্ডের। গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অ্যাডহক কমিটি গঠন সময় সীমা ধরা হলেও মাত্র ৪০ শতাংশ বিদ্যালয়ের কমিটি চূড়ান্ত হয়েছে।
বোর্ড সূত্র জানায় এখনো চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরার বেশিরভাগ স্কুলের আবেদন বোর্ডে জমা পড়েনি। অন্য জেলাগুলোরও সব বিদ্যালয়ের আবেদন জমা হয়নি।
বোর্ড সূত্র আরো জানায়, ৬ মাসের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সম্মতি লাগছে। প্রশাসনের সম্মতি নিতে নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। শিক্ষক প্রতিনিধির মনোনয়নও দিচ্ছেন শিক্ষা অফিসার। অভিভাবক সদস্যের মনোনয়ন দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এর জন্যে শিক্ষা অফিস, ইউএনও অফিস ও জেলা প্রশাসকের অফিসে দৌড়াতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে। এই সুযোগে অলিখিতভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাব বিস্তার করার সুযোগও পাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিদ্যালয় থেকে সভাপতি হিসেবে ৩জনের নাম প্রস্তাবনা করা হচ্ছে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের প্যাডে দেয়া ৩ জনের তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকের নামটি গুরুত্ব পায় বেশি। বাস্তবে তিন জনের যে কোন একজন সভাপতি হিসেবে মনোনীত হচ্ছেন।
একজন প্রধান শিক্ষক জানান, সাধারণত তালিকার প্রথম ব্যক্তি বাদ পড়লে অভিযোগ বেশি উঠে।
বোর্ডে গেলে দেখা যায় চেয়ারম্যান, সচিব, বিদ্যালয় পরিদর্শক, উপপরিদর্শক বা সংশ্লিষ্ট শাখায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষের ৩-৪ জনের গ্রুপ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত। দিনের বেশিরভাগ সময় এই সব অফিস লোকে পরিপূর্ণ থাকছে। দায়িত্বশীলদের কাজে এরা সমস্যা করছেন।
কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা মনে করেছিলেন, বিদ্যোৎসাহী কাউকে সভাপতি করবেন, বিগত সরকারের আমলে সভাপতি তৈরি নিয়ে যে বাণিজ্য হয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পেতে হয়েছে, এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মতির মানতে হয়েছে এখন তেমন হবে না। সত্যিকারের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে। বাস্তবে তা হচ্ছে না। স্থানীয় নানা দল ও মতের প্রভাব মানতে হচ্ছে। অলিখিত চাপও আসছে।
বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. কামরুজ্জামান জানান, খুব চাপে দিন পার হচ্ছে। এখনো অনেক স্কুলের আবেদন জেলা প্রশাসনের দপ্তর হয়ে বোর্ডে আসেনি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠানের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দেড় হাজারের বেশি। যারা অভিযোগ করছেন তারা ঠিক করছেন না। কারো কারো সুপারিশ হয়তো রাখতে হচ্ছে। অনেক স্তর থেকেও সুপারিশ আসছে, বিদ্যালয় প্রধানও সুপারিশ করছেন। এ কারণে হয়তো সিরিয়াল ভেঙ্গে যাচ্ছে কিন্তু অনৈতিক সুযোগ নিচ্ছেন না বোর্ডের কেউ। সব অভিযোগ সত্যি না তবে প্রচুর সুপারিশ সামলাতে হচ্ছে। সব আবেদন পৌঁছালে এ মাসের মধ্যে কমিটি অনুমোদন শেষ করা হবে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর এস এম মাহাবুবুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের জন্যে কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে বোর্ড থেকে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের দপ্তরে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বিষটি দ্রুত শেষ করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ফ্যাসিবাদের কেউ কমিটিতে স্থান পাক তা যেমন কাম্য নয় তেমনি কমিটি গঠন বা সভাপতি হয়ে কেউ প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল বা দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করুক তাও বোর্ড সচিব হিসেবে তিনি বা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কেউ আশা করে না।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আসমা বেগম জানান, দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে, সুপারিশ , সিরিয়াল ভেঙ্গে তাদের মনোনীতকে মনোনয়ন দেয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জেলা প্রশাসকরা সময় মতো আবেদনগুলি ছেড়ে দিলে এতটা সময় লাগতো না। এখন সময় মতো কাজ ওঠানো মুস্কিল হয়ে যাচ্ছে।
ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আইন শৃঙ্খলার যেনো কোনো প্রকার অবনতি না হয় বা স্থানীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় যে বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা কমিটি গঠনের ব্যাপারে কাজ করছেন। প্রয়োজনে কোনো কোনো আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতর্তা দিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন। সিরিয়াল ভাঙ্গার ব্যাপারে তিনি বলেন, ৩ জনের যে কাউকে বোর্ড অনুমতি দিতে পারে এর জন্যে এটা বাধ্যবাধকতা নেই যে প্রথমজনকেই দিতে হবে
আরও পড়ুন খাগড়াছড়িতে চার সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে “বিএমইউজে” চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিবাদ সভা
Leave a Reply