ফলোআপঃ
সেলিম চৌধুরী হীরা, লাকসাম : লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শিরোনামে ৬ মার্চ জাতীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে দিন-রাত পুরনো হিসাব মিলানোর কাজ করছে স্কুলের অফিস সহায়ক মাহবুব সহ তার সহকর্মীরা।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর পেয়ে সরজমিনে গিয়ে তার সত্যতা মিলে৷ সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষকের কক্ষের বাহিরে তালা লাগিয়ে ভিতরে দিন-রাত কাটছাটে মাধ্যমে ওই হিসাব মিলানোর কাজ চলছে। অন্য একটি রুমের ভিতর দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় চারজন মহিলা শিক্ষিকা প্রাথমিক শাখার হিসাব মিলানোর কাজে ব্যস্ত এবং অফিস সহায়ক মাহবুব মাধ্যমিক শাখার হিসাব মিলানোর কাজ করছেন। খবর পেয়ে উক্ত রুমে প্রধান শিক্ষক এসে উত্তেজিত ভাব দেখান।
প্রধান শিক্ষক এসে পড়ায় কাটছাট করে পুরনো হিসাব মিলানোর কাজে ব্যস্ত থাকা অফিস সহায়ক ও প্রাথমিক শাখার শিক্ষিকারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে তারা প্রতিবেদকের সাথে কোন কথা বলতে চাননি। কোন প্রশ্ন করলে প্রধান শিক্ষক নিজেই আগ বাড়িয়ে উক্ত প্রশ্নের গোঁজামিলের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। কাটছাট করে পুরনো হিসাব মিলানোর ছবি ও ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
সূত্র জানিয়েছে, লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নিমিত্তে তিন সদস্যের একটি অডিট কমিটি গঠন করেছেন লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাউছার হামিদ। ১৩ ফেব্রুয়ারি গঠিত ওই অডিট টিম ১০ কার্য দিবসের মধ্যে অডিট রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রসরাজ দাস গঠিত কমিটিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেনা বলে জানা গেছে। একারণে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে ব্যঘাত সৃষ্টি হয়েছে বিধায় উক্ত কমিটি তদন্ত করবেনা বলে কমিটির আহ্বায়ক, লাকসাম উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার খন্দকার মাসুম বিল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাউছার হামিদ বলেন, লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন খবর শুনেছি। পত্র-পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ দেখেছি। প্রকাশিত খবর তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি এবং শিক্ষা বোর্ডে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
লাকসাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় দেখেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে।
অডিট কমিটির আহ্বায়ক, লাকসাম উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার খন্দকার মাসুম বিল্লাহ বলেন, লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অডিট করার জন্য আমাকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি করেছিলেন লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু অডিট কাজে স্কুল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করায় অডিট না করে প্রতিবেদন দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের অভিবাবক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, উক্ত প্রতিষ্ঠানে অতীতে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। এখন আর দুর্নীতি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুর্নীতি প্রতিরোধে সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছি ভবিষ্যতেও রাখবো। এ বিষয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি তিনিও দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছেন। আশা করি এই স্কুল থেকে দুর্নীতির মূলউৎপাটন করা যাবে।
আরও পড়ুনঃ লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
Leave a Reply